কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আপনি অনেক খোঁজাখুজির পর নিশ্চয়ই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন। 
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা

আমরা সবাই কালোজিরা বা কালিজিরার সাথে পরিচিত। আমাদের সকলের খুবই চেনা একটি মসলা হচ্ছে কালিজিরা। কালিজিরা মশলার পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধি গুণে রয়েছে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এটি নানা রোগের প্রতিষেধক প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করছে। আজকে আমি কালিজিরার উপকারিতা ও কালিজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।

আপনি যদি কালিজিরার উপকারিতা এবং খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম জানতে চান, তাহলে আমি বলব আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে কালিজিরা উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন, কারণ আজকে আমি কালিজিরার উপকারিতা এবং খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত করব।

কালিজিরা বা কালোজিরা কি

কালোজিরা কি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি। কালিজিরার/কালোজিরা বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে (নাইজিলা সেটিভা লিন) কালোজিরার গাছ দেখতে অনেকটা মাঝারি আকৃতির। কালোজিরা গাছ শুধুমাত্র একবার ফুল এবং ফল দেয় একটি গোলাকার কালো ফল থেকে তিনকোনা আকৃতির কালো রঙ্গের ৩০ থেকে ৩৫ টি দানা পাওয়া যায়। কালোজিরার বীজ ছোট হওয়া সত্বেও এর গুনাগুন ও উপকারিতা অনেক বেশি।

কালিজিরর উপকারিতা

আসুন আলোচনা করি কালোজিরার উপকারিতা। এটি মসলা জাতীয় আমাদের কাছে পরিচিত হলেও এটির অনেক গুণাগুণ রয়েছে। এ কালোজিরা আমাদের কি কি উপকারে আসে তা এখন বিস্তারিত আলোচনা করব। কালোজিরার উপকারিতা জানতে নিচের সম্পন্ন পড়ে ফেলুন।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে

কালোজিরা সবচেয়ে ভালো গুন হচ্ছে কালোজিরা আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কালোজিরা ভূমিকা অপরিসীম। সুতরাং যাদের স্মৃতিশক্তি একটু কম তাদেরকে নিয়মিত কালোজিরা সেবনে স্মৃতিশক্তি সহযোগিতা করবে।

আমরা যদি নিয়মমাফিক কালিজিরা সেবন করে থাকি তাহলে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, কালিজিরাতে এন্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক পদার্থ রয়েছে যা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এতে আমাদের স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়। 

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

কালোজিরা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনার যদি হজমে কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই কালোজিরা খেতে পারেন।
কালিজিরা সেবনে আমাদের যে সকল উপকার পেয়ে থাকি তার মধ্যে হজম শক্তি অন্যতম। অনেক সময় খাদ্যের সমস্যার কারণে আমাদের পেটে মাঝে মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়, আমরা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে এক অথবা দুই চা চামচ কালিজিরা বেটে পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকি, তাহলে আমাদের হজম শক্তি বাড়াবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপা সমস্যা দূর করতে পারি এছাড়া অন্যান্য হজম সমস্যা বিরুদ্ধেও এটি কার্যকরী।

অতিরিক্ত চর্বি কমায়

শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে কালিজির একটি অতি কার্যকরী জিনিস, অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর মোটা হয়ে যায়। শরীরের চর্বি জমে যায়। প্রতিদিন সকালে আমরা যদি খালি পেটে এক চা- চামচ মধুর সাথে অর্ধেক চা চামচ কালিজিরা খাওয়ার অভ্যাস করি, তাহলে শরীরের অতিরিক্ত মেয়াদ বা চর্বি কমে যাবে।

 উজ্জ্বলতা ধরে রাখে

মুখে ব্রণের সমস্যা হচ্ছে আমাদের কমন সমস্যা, কালিজিরার ত্বকের বা মুখের ব্রণ বা দাগ দূর করতে সাহায্য করে। কালিজিরার তেলের সাথে সামান্য পরিমাণে লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দুবার লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার মুখের ব্রণের সমস্যা দূর হবে এবং মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

মাথা ব্যাথা দূর করে

আপনার মাথা ব্যাথা দূর করতে কালোজিরার ভূমিকা অপরিসীম। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা বা মাথা ধরা বলে থাকি এটি হয়ে থাকে। আপনি যদি কারো কালোজিরা ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এই মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। মাথা ব্যথার জন্য কালোজিরা কি পরিমানে ব্যবহার করবেন তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
মাথাব্যথা দূর করতে কালিজিরা অতি প্রয়োজনীয় জিনিস, কালিজিরা অনেক লম্বা সময় ধরে মাথা ব্যাথা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ১থেকে ২ চা-চামচ কালোজিরা তেল মাথায় ভালোভাবে মালিশ করলে উপকার পেতে পারেন।

এটি শরীরে মালিশ করলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সতেজ রাখে। ফলে জীবনুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে দেহেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য সার্বিক উন্নতি করে।

জীবনে সফল হওয়ার জন্য আসলে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। জীবনের সফল হওয়ার জন্য এখানে একটি আর্টিকেল রয়েছে যদি সময় থাকে তাহলে অবশ্যই নিচের লিংকে ক্লিক করে দেখে আসবেন।

অনিয়মিত মাসিক সমস্যা

কালিজিরা মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক সমস্যা সমাধান করে, অনেক সময় দেখা যায় মেয়েদের নিয়মিত মাসিক হয় না আর এটি মহিলাদের কমন সমস্যার মধ্যে একটি। নিয়মিত এক কাপ কাঁচা হলুদের রস সমপরিমাণ আতপ চালের ধোয়া পানি এর সাথে একট চা-মচ কালিজিরা মিশিয়ে দিনে তিনবার খেলে মেয়েদের এই সমস্যার সমাধান হয় এভাবে চারথেকে পাঁচ সপ্তাহ খেলে এই সকল সমস্যার ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে

কালিজিরা নিয়মিত নিয়ম করে খাওয়ার ফলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি হচ্ছে যৌন সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে নিয়মিত কালিজিরা তেল ব্যবহারের ফলে পুরুষের বীর্যের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দেয়। এক চা চামচ মাখন এক চা চামচ যাইতুন তেল, সমপরিমাণ কালিজিরা তেল ও মধুসহ প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি

শিশু দৈহিক শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে কালিজিরার ভূমিকা অপরিসীম। যেসব শিশুর বয়স দুই বছরের কম সেসব শিশুদের কালিজিরা না খাওয়ানই ভালো। তবে দুই বছরের বা তার বেশি বয়সের বাচ্চাদের খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। কালিজিরার বহু উপকারিতা গুণ আছে আর এই কারণে কালোজিরাতে সকল রোগের ওষুধ বলা হয়।এছাড়া গ্যাস্ট্রিক সর্দি, কাশি এবং শান্তিপূর্ণ ঘুমের জন্য কালিজিরার বিকল্প নেই।

কালিজিরা সেবনে যেসব রোগ ভালো হয়ঃ
এখন আমরা তো চেষ্টা করব কালোজিরা সেবনে যে রোগ ভালো হয় বা যেসব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে।

চর্মরোগ নিরাময়

চর্মরোগ একটি বিরক্তি কর রোগ। যা বিভিন্ন সময়ই বিভিন্ন ভাবে হয়ে থাকে। এই কালোজিরা ব্যবহারে আপনার চর্ম রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চর্ম রোগ নিরাময়ে কালিজিরা তেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এক চা চামচ কাঁচা হলুদের সাথে সমপরিমাণ কালিজিরা

হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে কালিজিরা খুবই কার্যকরী যাদের হাঁপানি সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খাবারের সঙ্গে রাখতে পারেন কালিজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি রোগ ভালো হয়। 

বাতের ব্যথা নিরাময়

চর্মরোগ হাঁপানি রোগের মত বাতের ব্যথা নিরাময়ে কালিজিরার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের বাতের ব্যাথা আছে তারা যদি নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যায় কালোজিরার তেল মালিশ করে তবে বাতের ব্যাথা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়

কালিজিরার ডায়াবেটিস রোগ নিরাময় খুবই উপকারী, কালিজিরার তেল ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করে এটি রক্তে শর্করা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীর ডায়াবেটিস আর বাড়ে না এবং দিন দিন সে রোগী সুস্থতা লাভ করে।এমনকি ক্যান্সার রোগ নিরাময়ে কালিজিরা খুবই কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।

দাঁতের ব্যথা নিরাময়

বহু গুনে গুণান্বিত এই কালোজিরা দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে কালিজিরা খুবই কার্যকরী, অনেক সময় আমাদের দাঁতের গোড়া ব্যথা করে, আবার দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। যাদের এই সমস্যা আছে তারা হালকা কুসুম পানির সাথে যদি ব্যবহার করেন তাহলে বিশেষ উপকার পাবেন।

কালিজিরার অপকারিতা

কালিজিরা এমন একটি জিনিস যার অপকারিতা নেই বললেই চলে,নিয়মমাফিক কালিজিরার ব্যবহারে কোন কিছুতেই তেমন কোন ক্ষতি নেই।তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত সবই খারাপ,তাই একসঙ্গে বেশি পরিমাণে কালিজিরা খেলে পিত্তনালিতে সমস্যা হতে পারে।এর স্বাদ কিছুটা ঝালের মত তাই বেশি পরিমাণ কালিজিরা খেলে মুখসহ গলা জ্বলতে পারে।

তবে যাদের কালিজিরা এলার্জি আছে তাদের কালিজিরা থেকে দূরে থাকাই ভালো। একই সঙ্গে গর্ভবতী মা ও দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের একটি সরাসরি না খাওয়ানোই ভালো। তবে কালিজিরার তৈল শিশুর শরীরে মালিশ করা যেতে পারে।

উপসংহার:

প্রিয় পাঠক আজ কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোন টপিক নিয়ে হাজির হবো। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই সাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url