কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি

ভূমিকা

আসসালামু আলাইকুম । প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি, কলা বাগানের যত্ন ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা বা কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম কী তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন।
কলা বাগানের যত্ন ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি, কলা বাগানের যত্ন ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা বা কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম কী তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে  পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
                        

কলা বাগানের যত্ন ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা

কলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ফল। ইহা সুস্বাদু, সহজলভ্য ও পুষ্টিকর। পরিসংখ্যান মতে ফলের মোট উৎপাদনের শতকরা ৪২ ভাগই হল কলা। কলা সারা বছরই পাওয়া যায়। এর ফলনও অন্যান্য ফল ও ফসল অপেক্ষা অনেক বেশি। তাই কলার চাষ অত্যন্ত লাভজনক।

কলা মূলত ক্যালরি সমৃদ্ধ ফল। এছাড়াও এতে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। পাকা কলা ফল হিসেবে সবার নিকট সমাদৃত। কাঁচা কলার ভর্তা, ভাজি, তরকারি ও চপ অনেকের প্রিয় খাদ্য।

এছাড়া কাঁচা কলা ডায়রিয়ায় ও পাকা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণের পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে অনেক বাগানে কলার ফলন কম হচ্ছে কারণ কলা গাছ লাগিয়ে পরবর্তীতে অনেক কৃষক ভাইরা কোন যত্ন  পরিচর্যা নিতে চান না।

কৃষক ভাইরা মনে রাখবেন অধিক কলা পেতে হলে কলা বাগানের যত্ন পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কলা বাগানে সঠিক যত্ন পরিচর্যা করা হলে কৃষক ভাইরা আশানুরূপ ফলন পেতে পারেন।

কৃষক ভাইরা কলা বাগানে যে-সব যত্ন পরিচর্যা করা প্রয়োজন তা জানিয়ে দিচ্ছি-

কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম

প্রথমেই বলবো সার প্রয়োগের কথা।প্রতিটি গাছের জন্য পচা গোবর ১৫-২০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০-৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০-৩০০ গ্রাম প্রয়োজন হয়।

অর্ধেক পরিমাণ গোবর, টিএসপি ও জিপসাম জমি তৈরির সময় বাঁকি অর্ধেক গোবর , টিএসপি ও জিপসাম এবং এমওপির ২৫% গর্তে প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ২৫% ইউরিয়া, ২৫% এমওপি জমিতে প্রয়োগ করে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

এর দুই মাস পরপর গাছ প্রতি ৭৫ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৫০ গ্রাম এমওপি, প্রয়োগ করতে হবে। তবে ফুল আসার পর এই পরিমাণ দ্বিগুন করতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকলে ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দেয়া দরকার। আর একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে মোচা আসার পূর্ব পর্যন্ত গাছের গোড়ায় কোন তৈউর রাখা উচিত নয় তবে মোচা আসার পর গাছ প্রতি একটি মাত্র তেউড় রাখা যেতে পারে।

কলা মোটা করার পদ্ধতি সহজেই

কলা মোটা করার পদ্ধতি:
  • মাটি ও জলবায়ু:
  • মাটি: কলা সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। মাটির pH 6.5 থেকে 7.5 এর মধ্যে হলে ভালো।
  • জলবায়ু: শীতকালে এবং প্রচুর আর্দ্রতাযুক্ত জলবায়ুতে কলা গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
চারা রোপণ:
সময়: 
  • ভাদ্র মাস ছাড়া যে কোনো মাসেই চারা রোপণ করা যায়। তবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ এবং মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র।
পদ্ধতি: 
  • রোপণের জন্য গর্ত তৈরি করুন যা 60 সেমি গভীর এবং 60 সেমি চওড়া। গর্তে 10 কেজি গোবর সার, 100 গ্রাম টিএসপি, এবং 50 গ্রাম এমওপি সার দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর চারা রোপণ করুন।
সার প্রয়োগ:
রাসায়নিক সার:
  • রোপণের 15 দিন পর: 100 গ্রাম ইউরিয়া, 50 গ্রাম টিএসপি, এবং 25 গ্রাম এমওপি সার প্রতি গাছে প্রয়োগ করুন।
  • 3 মাস পর: 150 গ্রাম ইউরিয়া, 75 গ্রাম টিএসপি, এবং 37.5 গ্রাম এমওপি সার প্রতি গাছে প্রয়োগ করুন।
  • 6 মাস পর: 200 গ্রাম ইউরিয়া, 100 গ্রাম টিএসপি, এবং 50 গ্রাম এমওপি সার প্রতি গাছে প্রয়োগ করুন।
জৈব সার:
  • গোবর সার: প্রতি বছর গাছের গোড়ায় 20-25 কেজি গোবর সার প্রয়োগ করুন।
  • হলুদ সরিষার খৈল: প্রতি বছর গাছের গোড়ায় 5-10 কেজি হলুদ সরিষার খৈল প্রয়োগ করুন।
পানি সেচ:
  • গরমের সময়: সপ্তাহে 2-3 বার পানি সেচ করুন।
  • বর্ষার সময়: প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ করুন।
  • শীতের সময়: 10-15 দিন পর পর পানি সেচ করুন।
আগাছা দমন:
  • নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করুন।
  • আগাছা নাশক ব্যবহার করতে পারেন।
  • পোকামাকড় ও রোগ বালাই:
  • পোকামাকড় ও রোগ বালাই দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
  • কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যান্য:
  • গাছের গোড়ায় মাটি চাপা দিন।
  • অতিরিক্ত ছোট গাছ (সাকার) কেটে ফেলুন।
  • গাছে ঝুঁটি দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
  • কলা পাকার সময় ইথেলিন ব্যবহার করতে পারেন।
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনি মোটা ও ভালো মানের কলা উৎপাদন করতে পারবেন।

কলার ফলন বৃদ্ধির উপায়

কলার ফলন বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

উপযুক্ত জাতের চারা নির্বাচন: কলার ফলন বৃদ্ধির জন্য প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল উপযুক্ত জাতের চারা নির্বাচন করা। বিভিন্ন জাতের কলার মধ্যে ফলন, স্বাদ, আকারের তারতম্য রয়েছে। তাই চাষের উদ্দেশ্য ও এলাকার আবহাওয়া বিবেচনা করে উপযুক্ত জাতের চারা নির্বাচন করা উচিত।
বাংলাদেশে প্রচলিত কলার কিছু ভালো জাতের মধ্যে রয়েছে:
আম্রপালি: 

কলা বাগানের উপযুক্ত জমি নির্বাচন: 

কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি, কলা চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকা উচিত। মাটির পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকা উচিত।

জমি তৈরি: 
  • কলা চাষের জন্য জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। জৈব সারের মধ্যে গোবর, আবর্জনা, ছাই ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ: 
  • কলা গাছের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। গাছের বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা উচিত। 
কলা গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সারগুলি হল:
জৈব সার: গোবর, আবর্জনা, ছাই ইত্যাদি।
রাসায়নিক সার: ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি।
সেচ: কলা গাছের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত সেচ দেওয়া প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত সেচ গাছের ক্ষতি করতে পারে।
পরিচর্যা: কলা গাছের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত পরিচর্যা করা প্রয়োজন। গাছের আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, সেচ দেওয়া ইত্যাদি কাজ নিয়মিত করতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ দমন: কলা গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হতে পারে। তাই পোকামাকড় ও রোগ দমনের জন্য নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কলার ফলন বৃদ্ধির জন্য উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি সঠিকভাবে পালন করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
এছাড়াও, কলা গাছের ফলন বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
  • গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
  • গাছের গোড়ায় গোবর বা আবর্জনা দিয়ে মাটি ঢেকে রাখলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
  • গাছের ডালপালা নিয়মিত ছাঁটাই করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।
  • গাছের গোড়ায় সার ও সেচ দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে গাছের মূল ক্ষতি না হয়।
  • কলার ফলন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শের জন্য স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

কলা বাগানের রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা

আগাছা দমনঃ 
  • বাগানে গাছ ছোট অবস্থায় আগাছা বেশী জন্মে। তবে সেচ দেয়ার পর জমিতে জো আসলে হালকা চাষ দিয়ে কুপিয়ে বাগান আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় পাতা পরিস্কারঃ 
  • কলা গাছে এসময় মরা এবং রোগাক্রান্ত পাতা কেটে তা পুড়ে ফেলতে হবে এতে করে বাগানে রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং বাগানে আলো বাতাস প্রবেশ করলে গাছ ও সুস্থ সবল থাকবে। কারণ মরা পাতা রোগ ও পোকা মাকড়ের আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে।
গোড়ায় মাটি দেয়াঃ 
  • বর্ষার সময় অধিক বৃষ্টির কারণে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যায়। তাই দুই বেডের মাঝখানের নালা হতে মাটি তুলে গাছের গোড়ায় দিয়ে বেড উচু করে দিতে হবে।
আন্তফসলের চাষঃ 
  • কলার চারা রোপণের পর ঐ জমিতে সেপ্টেম্বর হতে মার্চ মাস আন্তফসল হিসাবে মূলা, পালংশাক, লালশাক, সরিষা, পেঁয়াজ, আলু সহ বিভিন্ন শাকসবজি করা যেতে পারে। তবে আন্তফসলের চাষ করতে হলে অতিরিক্ত কিছু সারও প্রয়োগ করতে হবে যাতে কলা গাছের খাদ্যের ঘাটতি না হয়।
সাকার বা তেউড় উৎপাদনঃ 
  • প্রতিটি কলা গাছের গোড়া থেকে ছোট চারা বের হয় তাকে সাকার বা তেউড় বলে। গাছের মোচা আসার পূর্ব পর্যন্ত কোন তেউড় রাখা যাবে না তবে মোচা আসার পর ৩-৪ মাস পর্যন্ত গাছ প্রতি মাত্র একটি তেউড় রাখতে হবে। যা পরবর্তীতে মুড়ি ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। একাধিক চারা রাখা উচিত নয়। কারণ মাতৃগাছের খাবারের সাথে প্রতিযোগিতা হওয়ায় মাতৃগাছ দুর্বল হয়ে যায়।
মোচা অপসরারণঃ 
  • মোচার নিচের দিকে পুরুষ ফুল থাকায় শুধু উপরের ফুলগুলোতেই ফল হয়। তাই মোচা থেকে কলা বের হওয়ার পর শেষোক্ত ফানার ৪-৫ সেঃ মিঃ নিচে মোচা কেটে দিতে হয়। মোচা না কাটলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের পোকমাকড়ের আশ্রয়স্থল হিসাবে বাসা বাধে।
কলার মোচা কাটার নিয়ম
  • কলার মোচা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। কলার মোচা কাটার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে মোচা ভালোভাবে কাটা যায় এবং এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় না।

কলার মোচা কাটার নিয়ম:

কাটার উপকরণ:
  • কলার মোচা কাটার জন্য একটি বড় চাকু বা ছুরি প্রয়োজন। চাকু বা ছুরি ভালোভাবে ধার দেওয়া থাকতে হবে।
কাটার সময়: 
  • কলার মোচা সকালবেলা বা বিকেলে কাটা ভালো। এই সময় আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে এবং মোচা কাটা সহজ হয়।
কাটার পদ্ধতি: 
  • কলার মোচা গাছ থেকে কাটার জন্য প্রথমে গাছের গোড়ায় একটি চাকু দিয়ে একটি কাটা দেওয়া হয়। এরপর মোচাটিকে হাত দিয়ে ধরে উপরে তুলে নিয়ে চাকু দিয়ে কাটা হয়। মোচা কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মোচার ভিতরের অংশ নষ্ট না হয়।
মোচা পরিষ্কার করা: 
  • মোচা কাটার পর মোচার ভিতরের অংশ থেকে হলুদ রঙের অংশ ফেলে দিতে হবে। এছাড়াও, মোচার গায়ে থাকা কাঁটা ও ফাটা অংশ ফেলে দিতে হবে।
কলার মোচা কাটার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
কলার মোচা কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মোচা কাটার সময় চাকু বা ছুরি দিয়ে হাত কাটার ঝুঁকি থাকে।মোচা কাটার পর দ্রুত পরিষ্কার করে নিতে হবে। মোচা দীর্ঘক্ষণ পরিষ্কার না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে।
কলার মোচা কাটার পর বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। মোচা ভর্তা, মোচা ঘন্ট, মোচা চপ ইত্যাদি জনপ্রিয় মোচা পদ।
এখন আলোচনা করবো এই কলা গাছে কি কি রোগের আক্রমণ হয় তা নিয়ে- কলা বাগানের যত্ন ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা - কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম

কলার পানামা রোগ, লক্ষণ ও প্রতিকার

এটি একটি ছত্রাকজনিত মারাত্বক রোগ।  কলার পানামা রোগ এ আক্রমণে প্রথমে বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রং ধারণ করে। পরবর্তী সময় পাতা বোঁটার কাছে ভেঙ্গে গাছের মাথায় খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
অবশেষে গাছ মরে যায়। কোন কোন সময় গাছ লম্বালম্বিভাবে ফেটেও যায়। অভ্যন্তরীণ লক্ষণ হিসেবে ভাসকুলার বান্ডেল হলদে-বাদামী রং ধারণ করে।

প্রতিকার
  • আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছের তেউড় রোপণ করা যাবে না।
  • রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করতে হবে।
  • আক্রান্ত জমিতে ৩-৪ বছর কলা চাষ করা যাবে না।

কলার সিগাটোকা রোগ, লক্ষণ ও প্রতিকার

এ রোগের আক্রমণে প্রাথমিকভাবে ৩য় বা ৪র্থ পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। ক্রমশ দাগগুলো বড় হয় ও বাদামি রং ধারণ করে। এভাবে একাধিক দাগ মিলে বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং তখন পাতা পুড়ে যাওয়ার মত দেখায়।

প্রতিকার
  • আক্রান্ত পাতা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি প্রোপিকোনাজল গ্রুপের অথবা ২ গ্রাম কার্বিন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে ছিটাতে হবে।

কলার বানচি-টপ ভাইরাস রোগ, লক্ষণ ও প্রতিকার

এ রোগের আক্রমণে গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতা আকারে খাটো, অপ্রশস্ত এবং উপরের দিকে খাড়া থাকে। কচি পাতার কিনারা উপরের দিকে বাঁকানো এবং সামান্য হলুদ রঙের হয়। অনেক সময় পাতার মধ্য শিরা ও বোঁটায় ঘন সবুজ দাগ দেখা যায়। পাতার শিরার মধ্যে ঘন সবুজ দাগ পড়ে।
প্রতিকার
  • আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • গাছ উঠানোর আগে জীবাণু বহনকারী ‘জাব পোকা’ ও ‘থ্রিপস’ দমনের জন্য কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক (২ গ্রাম/লিঃ)  স্প্রে করতে হবে।

কলা মোটা করার পদ্ধতি

কলা মোটা করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
উপযুক্ত জাতের চারা নির্বাচন: কলা মোটা করার জন্য প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল উপযুক্ত জাতের চারা নির্বাচন করা। বিভিন্ন জাতের কলার মধ্যে মোটার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাই মোটা কলা চাষের জন্য উপযুক্ত জাতের চারা নির্বাচন করা উচিত। 
বাংলাদেশে প্রচলিত কলার মধ্যে কিছু ভালো জাতের মধ্যে রয়েছে: কলা বাগানের যত্ন ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা - কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম।
  • আম্রপালি: এই জাতের কলা মোটা হয়।
  • কাঁঠালপাসি: এই জাতের কলা মোটা হয়।
  • কাঠালি কলা: এই জাতের কলা মোটা হয়।
উপযুক্ত জমি নির্বাচন: কলা চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকা উচিত। মাটির পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে থাকা উচিত।

জমি তৈরি: কলা চাষের জন্য জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং কলা মোটা হয়। জৈব সারের মধ্যে গোবর, আবর্জনা, ছাই ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

সার প্রয়োগ: কলা গাছের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। গাছের বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা উচিত। কলা গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সারগুলি হল:
জৈব সার: গোবর, আবর্জনা, ছাই ইত্যাদি।
রাসায়নিক সার: ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি।
সেচ: কলা গাছের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত সেচ দেওয়া প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত সেচ গাছের ক্ষতি করতে পারে।

পরিচর্যা: কলা গাছের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত পরিচর্যা করা প্রয়োজন। গাছের আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, সেচ দেওয়া ইত্যাদি কাজ নিয়মিত করতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগ দমন: কলা গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হতে পারে। তাই পোকামাকড় ও রোগ দমনের জন্য নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কলা মোটা করার জন্য উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি সঠিকভাবে পালন করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

এছাড়াও, কলা গাছের কলা মোটা করার জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
  • গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
  • গাছের গোড়ায় গোবর বা আবর্জনা দিয়ে মাটি ঢেকে রাখলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
  • গাছের ডালপালা নিয়মিত ছাঁটাই করলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং কলা মোটা হয়।
  • গাছের গোড়ায় সার ও সেচ দেওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে গাছের মূল ক্ষতি না হয়।
  • কলা মোটা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শের জন্য স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
কলা গাছের কলা মোটা করার জন্য কিছু রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অত্যধিক রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে গাছের ক্ষতি হতে পারে।

উপসংহার:

পরিশেষে বলা দরকার কলা বাগানের যত্ন ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা বা কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়মসহ অন্যান্য করণীয়ের মাধ্যমে কলার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব এবং কৃষক ভাইগণ আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url