জমজমের পানি পানের ফজিলত ও নিয়ম

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আপনি অনেক খোঁজাখুজির পর নিশ্চয়ই জমজমের পানি পানের ফজিলত ও নিয়ম কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন। 
জমজমের পানি পানের ফজিলত ও নিয়ম
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে জমজমের পানি পানের ফজিলত ও নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

জমজমের পানি পানের ফজিলত ও নিয়ম

জমজমের পানির যত বরকত
জমজমের পানি ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় পানি হিসেবে বিবেচিত। এটি কেবল পানি নয়, বরং আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহের প্রতীক।

জমজমের পানির বরকত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত: জমজমের পানি পানের ফজিলত 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "জমজমের পানি হলো বরকতময়, তৃপ্তিদায়ক এবং রোগের ওষুধ।" (সহিহ মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'পৃথিবীর সর্বোত্তম পানি হলো জমজমের পানি।'" (সুনানে ইবনে মাজাহ)
আয়েশা (রাঃ) বলেন, "রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জমজমের পানি পান করতেন এবং বলতেন, 'এটি তৃপ্তিদায়ক ও পুষ্টিকর।'" (সহিহ বুখারী)

জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া

হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনায় এসেছে, ‘জমজমের এ পানি দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে তিন নিঃশ্বাসে পান করা সুন্নাত। সুতরাং বরকত ও উপকার পাওয়ার আশায় জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করাও উত্তম-

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ

উচ্চারণ : আল্লাাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ‘ইলমান না ফি‘আ, ওয়া রিযক্বন ওয়া সি‘আ, ওয়া শিফা আম মিন কুল্লি দা ইন।

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট উপকারী ইলম এবং হালাল প্রশস্ত রিজিক এবং সর্বপ্রকার রোগের শিফা চাচ্ছি।

জমজমের পানির বৈশিষ্ট্য

জীবাণুমুক্ত: জমজমের পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত, যা বিজ্ঞানের কাছেও আশ্চর্যের বিষয়।
খনিজ সমৃদ্ধ: জমজমের পানিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ রয়েছে যা মানবদেহের জন্য উপকারী।
ক্ষুধা নিবারণ: জমজমের পানি কেবল তৃষ্ণা নিবারণ করে না, বরং এটি ক্ষুধাও নিবারণ করতে সাহায্য করে।
রোগের ওষুধ: হাদিসে বর্ণিত, জমজমের পানি বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
আধ্যাত্মিক বরকত: জমজমের পানি পান করার মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহ লাভ করা সম্ভব।

জমজমের পানি পানের আদব

 আসুন এখন আমরা জমজমের পানি পানের আদব বা জমজমের পানি পানের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করি।
  • কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পান করতে হবে।
  • বিসমিল্লাহ বলে পান করতে হবে।
  • তিন ঢোকে পান করতে হবে।
  • পান করার পরে আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিত।
  • পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করতে হবে।
জমজমের পানি কেবল পানি নয়, বরং আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহের প্রতীক। জমজমের পানি পান করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি।

জমজমের পানি কতদিন রাখা যায়

জমজমের পানি কতদিন রাখা যাবে তা নির্ভর করে কতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে তার উপর।
সাধারণত, জমজমের পানি:
ঘরের তাপমাত্রায়: ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
ফ্রিজে: ১-২ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
জমজমের পানি দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য:
পানি ঠান্ডা রাখুন: জমজমের পানি ঠান্ডা রাখলে তা দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
পানি সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন: সূর্যের আলো জমজমের পানির গুণাগুণ নষ্ট করতে পারে।
বাতাসের সংস্পর্শে আসা থেকে রক্ষা করুন: বাতাসের সংস্পর্শে এলে পানিতে জীবাণু পোষা শুরু হতে পারে।
পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করুন: পাত্রটি অবশ্যই পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত হতে হবে।

জমজমের পানি নষ্ট হয়েছে কিনা তা বোঝার উপায়

আসুন আজ আমরা জমজমের পানি নষ্ট হয়েছে কিনা তা বোঝার উপায় জানার চেষ্টা করি। নিচের কারনগুলো দেখলে বুঝবেন জমজমের পানি নষ্ট হয়েছে।
পানির গন্ধে পরিবর্তন: যদি পানির গন্ধ নষ্ট হয় বা টক লাগে তাহলে বুঝতে হবে পানি নষ্ট হয়ে গেছে।
 রঙে পরিবর্তন: যদি পানির রঙ পরিবর্তিত হয় তাহলে বুঝতে হবে পানি নষ্ট হয়ে গেছে।
পানিতে ছত্রাক বা জীবাণু দেখা: যদি পানিতে ছত্রাক বা জীবাণু দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে পানি নষ্ট হয়ে গেছে।
নষ্ট হওয়া জমজমের পানি ব্যবহার করা উচিত নয়।

জমজমের পানি দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায়

  • জমজমের পানিতে লবণ বা অন্য কোনো কিছু মেশাবেন না।
  • পানি পান করার পরে পাত্রের মুখ ভালো করে বন্ধ করে রাখুন।
  • জমজমের পানি নিয়মিত পান করুন।
আশা করি জমজমের পানি দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় এবং জমজমের পানি কতদিন রাখা যায় তথ্যগুলো আপনার জন্য কাজে লাগবে।

জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা

জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা:
ধর্মীয় দিক থেকে:জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা
  • জমজম পানি বরকতময় ও শিফাপ্রদ।
  • রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জমজম পানির অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
  • জমজম পানি পানের উদ্দেশ্য পূরণ হয়।
  • এটি তৃপ্তিদায়ক খাদ্য ও রোগ হতে আরোগ্য।
  • হজরত ওমর (রাঃ) হাশরের ময়দানে পিপাসিত না হওয়ার নিয়তে জমজমের পানি পান করতেন।
বৈজ্ঞানিক দিক থেকে: জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা
  • জমজম পানিতে খনিজ পদার্থের ভারসাম্য রয়েছে।
  • এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ফ্লোরাইডের মতো খনিজ রয়েছে।
  • জমজম পানি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • জমজম পানি ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী।
  • এটি ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে জমজম পানি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
  • জমজম পানি কোনও ওষুধ নয়।
  • এটি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
  • জমজম পানি পরিমিতভাবে পান করা উচিত।
জমজম পানি ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক দিক থেকে অনেক উপকারিতা সম্পন্ন। তবে এটি পরিমিতভাবে পান করা উচিত এবং কোনও ওষুধের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আজ জমজমের পানি পানের ফজিলত ও নিয়ম নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোন টপিক নিয়ে হাজির হবো। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই সাইটটি ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url