মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক, আপনি অনেক খোঁজাখুজির পর নিশ্চয়ই শিশুর মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার কি তা জানার জন্যই আমাদের এই সাইটটিতে এসেছেন।
শিশুর মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
হ্যাঁ আজকে আমি শিশুর মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

শিশুর মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়

আমাদের দেশে স্মার্টফোন ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই স্মার্টফোন ব্যবহারের সবচেয়ে বড় আসুবিধা বা সমস্যা হচ্ছে আমাদের ছোট ছোট শিশুরা এই ফোনের প্রতি আসক্ত হওয়া। আর এই আসক্তের কারণে শিশুদের বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। চাইলেই আমরা শিশুদের স্মার্ট ফোনের আসক্তি থেকে দূর করা যায়। 

আপনি যদি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেল পুরোপুরি পড়েন তাহলে শিশুরা মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। শিশুরা অনুকরণ প্রিয় বড়রা শিশুদের সামনে যা কিছু করেন শিশুরা সে সকল কাজকর্ম অনুকরণ করার চেষ্টা করে। 

তাই বড়দের শিশুদের সামনে এমন কোন কাজকর্ম করা যাবে না যা অনুকরণের মাধ্যমে শিশুরা সেই জিনিসের উপর আসক্ত হয়ে পড়ে। আপনি যদি শিশুদের মোবাইলের আসক্তি কমানোর উপায় খুঁজেন তাহলে আমি বলব, আপনি সঠিক জায়গায় নক করেছেন। 

আপনি যদি আমার এই আর্টিক্যাল পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে কিভাবে মোবাইলের আসক্তি থেকে শিশুরা মুক্তি পাবে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। কারণ আজকে আমরা এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বর্তমান সময়ে মানুষের কাছে মোবাইল ফোন এমন একটি প্রয়োজনীয় বস্তুু হয়ে দাঁড়িয়েছে যেটা ছাড়া মানুষ এক মুহূর্তের জন্য চলতে পারে না। 

আমাদের দেশে দিন দিন স্মার্ট ফোনের ব্যবহার বেড়ে চলেছে, আর পাবেই বা না কেন, বর্তমানে সকল প্রকার সমস্যার সমাধান হচ্ছে স্মার্টফোন কথা বলা থেকে শুরু করে ছবি দেখা, ছবি তোলা, ভিডিও করা, ইত্যাদি যাবতীয় অজানা তথ্য জানার জন্য স্মার্ট মোবাইল ফোনর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিচের কাজগুলো করে আপনার শিশুর মোবাইল আসক্তি কমাতে পারেন। চলুন জেনে নেই শিশুর মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়।

শিশুদের বই পড়া, খেলাধুলা, গান, নাচ, আঁকাআঁকি, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা ইত্যাদির মতো বিকল্প কার্যক্রমে উৎসাহিত করুন। 

পাসওয়ার্ড ব্যবহার: মোবাইল ফোন ও অ্যাপের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যাতে শিশু সহজে ব্যবহার করতে না পারে।
অ্যাপ্লিকেশন নিয়ন্ত্রণ: 'Family Link' এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল ব্যবহারের সময়, অ্যাপ ব্যবহারের সময়, অনুমোদিত অ্যাপ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করুন।
মোবাইল অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করুন: রাতের বেলায় মোবাইল ফোন সরিয়ে ফেলুন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করুন।
সচেতনতা বৃদ্ধি: নিচের কাজগুলো করলে আপনার শিশুর মোবাইল আসক্তি কমতে পারে। চলুন জেনে নেই আপনার শিশুর বা শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়।
  • মোবাইল আসক্তির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিশুকে বুঝিয়ে বলুন।
  • মোবাইল ব্যবহারের নিয়ম শেখান।
  • আপনার শিশুর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন।
  • বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করুন।
  • শিশুকে মোবাইল ফোন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।
  • নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
  • ধৈর্য ধরুন, আচরণগত পরিবর্তনে সময় লাগবে।
  • প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
  • শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
  • পরিবারের সকলের জন্য মোবাইল ব্যবহারের নিয়ম প্রণয়ন করুন।
  • আপনার শিশুর সাথে বাইরে খেলতে যান।
  • শিশুদের বন্ধুদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন।
  • আপনার শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় তাদের উপর নজর রাখুন।
মনে রাখবেন, শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর জন্য পরিবারের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

শিশুর সামনে স্মার্ট ফোন ব্যবহার না করা

শিশুরা অনুকরণ প্রিয় তাই বড়রা যা করে শিশুরাও তাই করার চেষ্টা করে তাই তারা যখন বড়দের হাতে স্মার্টফোন দেখে সেটা নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ সে কখন না কখনও কোন না কোন ভাবে আপনাকে স্মার্ট ফোনে গেম খেলতে, কথা বলতে, অথবা ভিডিও কার্টুন দেখতে দেখেছে।

 আর গেম খেলা এবং কার্টুন দেখতে শিশুরা খুবই পছন্দ করে, তাই সে সুযোগ পেলে ফোন নিয়ে গেম খেলার বা ভিডিও দেখার চেষ্টা করে। তাই ওই শিশু যখন আপনার বা অন্য কারো স্মার্ট ফোন দেখে তখন সে সেই ফোন নেওয়ার চেষ্টা করে।

তাই আমাদের বা বড়দের খুব সাবধানে স্মার্টফোন ব্যবহার করা উচিত। পারতেপক্ষে আমরা শিশুর কাছ থেকে দূরে গিয়ে ফোনে আমাদের প্রয়জনীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে কোনক্রমেই শিশুর সামনে স্মার্টফোন ব্যবহার করা যাবে না।

শিশুকে ঘরের বাহিরে খেলার ধুলার ব্যবস্থা করা

শিশু কে ঘরের বাইরে পাঠানো খুব জরুরী সেজন্য ওর হাতে এমন সব খেলনা তুলে দিন যেগুলো বাইরে গিয়ে খেলতে পারে। যেমন ফুটবল, সাইকেল, ক্রিকেট ব্যাট, ইত্যাদি প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করে দিন। তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করার সুযোগ দিন, এবং বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান করুন।

বাহিরে গিয়ে খেললে তাকে উপহার দিন সেটা হতে পারে শিশুর পছন্দের খাবার অথবা খেলনা তাতে সে বাইরে যেতে উৎসাহ পাবে এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার থেকে সরে আসবে এভাবে সে একসময় স্মার্টফোনের আসক্ত থেকে মুক্তি পাবে।

নিজ সন্তানকে যথেষ্ট পরিমাণে সময় দিন

আপনার সন্তানকে যথেষ্ট পরিমাণে সময় দিতে হবে,যাতে কোন প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হওয়ার মতো কোনো সময় তার না থাকে। ঘরের কাজ বই পড়া খেলাধুলা পরিবারের সঙ্গে আড্ডা ও সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিতে হবে । এছাড়া শিশু বান্ধব ফিচারগুলো চালু করা যেতে পারে। সুতরাং শিশুর মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায় বা মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার কি তা  নিজে জেনে ও আরো সচেতন হতে হবে।

তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সন্তান অনুসরণ প্রিয়, অনেক সময় দেখা যায় বাবা মা যখন কাজের জন্য অফিস আদালতে চলে যায় তখন বেশিরভাগ শিশুরাই বাসার বিভিন্ন প্রকার ডিভাইস নিয়ে ব্যাস্থ থাকে এতে করে তারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে যে সময় পাওয়ার কথা সেটা পাচ্ছেনা ফলে তারা সেই ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন প্রকার গেম খেলে কার্টুন দেখে তারা সময় পার করে এতে করে তারা বাবা-মায়ের চেয়ে স্মার্টফোন নিয়েই থাকতে পছন্দ করে, তাই পিতা মাতাদের শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানদের যথেষ্ট পরিমাণে সময় দিতে হবে। এতে করে তারা স্মার্টফোন বা অন্য সকল ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের আসক্ত থেকে মুক্তি পাবে।

শিশুদের নার্সারি বা ফুলেরবাগান করতে উৎসাহ দেওয়া

বেলকনিতে বা ছাদের এক কোণে টবে পছন্দের কিছু গাছ লাগাতে পারেন। বাচ্চা কেউ এ কাজে উৎসাহিত করতে পারেন, আগাছা পরিষ্কার করা, গাছে পানি দেওয়া প্রকৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে বাচ্চারা আনন্দ পায় নতুন নতুন ফুল ফল সবজি চিনতে পারে নিজের বাগানের যত্ন নিতে ব্যস্ত থাকতে পারে। এতে সে ডিভাইস বা স্মার্টফোন নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকবে না অর্থাৎ মোবাইল আসক্তি অনেকটাই কমে যাবে।

শিশুকে ব্যস্ত রাখুন

শিশুকে বিভিন্ন প্রকার ছবি আঁকা, ইনডোর গেমস এসব দিয়ে শিশুকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। নতুন নতুন খেলায় বাচ্চাদের আগ্রহ বাড়ে বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে শব্দ এবং শব্দ দিয়ে বাক্য বানাতে বলুন, রঙ্গিন কাগজ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলা বানিয়ে দেখান, বানাতে বলুন এবং তাকে কাগজ রং পেন্সিল দিয়ে কার্ড বানাতে শেখান।

তাহলে খেলার ছলে সময় শেষ হয়ে যাবে আর বাচ্চা লিখতে পারলে অনেক টপিক দিয়ে দিন গল্প বা ছড়া লিখতে বলুন এতে বাচ্চার মোবাইল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের নেশা অনেকটা কমে যাবে।

গল্পের বই পড়তে উৎসাহ দিন

আপনি যখন কাজের জন্য বাহিরে যাবেন তখন শিশুদের পড়ার জন্য বিভিন্ন প্রকার গল্পের বই এনে বাচ্চাদের উপহার দিতে পারেন। এতে করে বাচ্চারা যেমন আনন্দ পাবে অপরদিকে সেই গল্পের বই পড়ে অনেক কিছু শেখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে দূরে থাকবে এতে করে তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি যেমন আসক্তি কমবে তেমনি গল্পের বই পড়ার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবে।

শিশুদের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বাড়ান

ছুটির দিনে অথবা আপনি যখনই কাজের ফাঁকে সময় পাবেন তখন শিশুকে নিয়ে বাহিরে বেড়াতে বের হন, এতে করে শিশুরা অনেক আনন্দ পায় আপনার চারপাশের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন।

এতে করে তাদের যেমন মানসিক বিকাশ হবে তেমনি বাসায় বাগানের গাছের পরিচর্যা প্রতি আগ্রহ বাড়বে। আপনি শিশুদের প্রকৃতির যত কাছে আনবেন তারা তত বেশি মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকবে তাদের বলুন আমাদের জীবনে প্রাকৃতিক জিনিসগুলোর গুরুত্ব কতটুকু।

মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার

আসুন আজ আমরা শিশুর মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
ব্যক্তিগত কারণ: মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার 
একাকিত্ব: যারা একাকী থাকেন, তাদের মোবাইল ফোন বন্ধু ও সঙ্গীর ভূমিকা পালন করে।
উদ্বেগ ও চাপ: যারা মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভোগেন, তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক বিভিন্ন ধরনের চাপ এবং উদ্বেগকে দূরে রাখার জন্য বা এগুলো থেকে মুক্ত থাকার জন্যই অনেকে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন।
নিম্ন আত্মসম্মান: যাদের আত্মসম্মান কম, তারা মোবাইল ফোনে অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
অনিয়ন্ত্রিত আবেগ: যারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদের আবেগ গোপন করার চেষ্টা করেন।
বিরক্তি: যারা সহজেই বিরক্ত হয়ে যান, তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদের মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করেন। বিরক্তিহীনতা থেকে দূরে রাখার জন্যই অনেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন। আর এ ভাই নিজেকে অন্যান্য সামাজিক বিভিন্ন কাজ এবং তার সমস্যা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন।
প্রযুক্তিগত কারণ: মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
সহজলভ্যতা: মোবাইল ফোন এখন সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের, তাই অনেকের কাছেই এটি সহজেই পৌঁছে যায়।
আকর্ষণীয় অ্যাপ: মোবাইল ফোনে অনেক আকর্ষণীয় অ্যাপ আছে যা ব্যবহারকারীদের আগ্রহী করে তোলে। বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় এপ্স এড এর মাধ্যমে সহজেই পেয়ে থাকি।
নোটিফিকেশন: মোবাইল ফোন থেকে বারবার নোটিফিকেশন আসার ফলে ব্যবহারকারীরা বারবার ফোনটি দেখতে বাধ্য হয়।
সামাজিক মাধ্যম: সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের "লাইক", "কমেন্ট" এবং "শেয়ার" এর মাধ্যমে সমর্থন ও স্বীকৃতি পেতে উৎসাহিত করে, যা তাদের আরও বেশি মোবাইল ব্যবহার করতে প্ররোচিত করে।
পরিবেশগত কারণ: মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার
পরিবারের অসচেতনতা: অনেক পরিবারে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-কানুন থাকে না, যার ফলে শিশুরা অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করতে পারে।
সমবয়সীদের প্রভাব: যখন বন্ধুরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তখন অন্যরাও তাদের অনুকরণ করতে পারে। বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই দামি ফোন ব্যবহার করে থাকেন এবং সমবয়সীদের মধ্যে সে ফোন ব্যবহারের বিষয়গুলো জেনে যাওয়ার পর বাবা-মার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কিনে নেন এবং মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েন।
সামাজিক চাপ: অনেক সময় সামাজিক চাপের কারণে মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। সে কারনে আমাদের সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মোবাইল আসক্তির প্রভাব:
শারীরিক প্রভাব: আসক্তির কারণে ঘুমের সমস্যা, চোখের সমস্যা, শারীরিক ব্যথা, এবং স্থূলতা।
মানসিক প্রভাব: বস্তুত বর্তমান সময়ে মোবাইল আসক্তির মূল প্রভাব উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, মনোযোগের অভাব, এবং আসক্তি।
সামাজিক প্রভাব: পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি, বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের অবনতি, এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষতি।
মোবাইল আসক্তির কারণ:
মোবাইল আসক্তির কারণ অনেক রয়েছে, তার মধ্যে যে কারনগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ন বা আপনার জানা প্রয়োজন বা মোবাইল আসক্তির বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি কারণ আমরা আলোচনা করব।

মনোবিজ্ঞান: 
মোবাইল ডিভাইসগুলি মস্তিষ্কের ডোপামিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে, যা একটি "ভাল অনুভূতি" নিউরোট্রান্সমিটার। এটি মোবাইল ডিভাইসের সাথে যুক্ত হতে পারে এমন একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যার ফলে আসক্তি হয়।

সামাজিক চাপ: মোবাইল ডিভাইসগুলি এখন আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা তাদের ব্যবহার করে যোগাযোগ করি, বিনোদন করি, এবং তথ্য অ্যাক্সেস করি। এই কারণে, মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার না করা অনেক লোককে বিচ্ছিন্ন এবং বাদ পড়া বোধ করতে পারে।

অবসর সময়ের অভাব: যখন আমাদের অবসর সময় কম থাকে, তখন আমরা মোবাইল ডিভাইসগুলিকে ক্ষণস্থায়ী বিনোদনের উৎস হিসাবে ঘুরে দেখার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

নির্দিষ্ট অ্যাপ বা গেমগুলির আসক্তি: কিছু মোবাইল অ্যাপ এবং গেমগুলি ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে যা আসক্তি তৈরি করতে পারে। তারা ব্যবহারকারীদের নিয়মিত ফিরে আসতে উৎসাহিত করার জন্য প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহার করে, যেমন রিওয়ার্ড সিস্টেম, নোটিফিকেশন এবং নোটিফিকেশন।

মোবাইল আসক্তির প্রতিকার

মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, আপনাকে আপনার মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার পর্যালোচনা করতে হবে এবং আপনার ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে কিছু টিপস রয়েছে:
প্রথম পদক্ষেপ: আসক্তি স্বীকার করা: মোবাইল আসক্তির প্রতিকার
  • আপনার মোবাইল ব্যবহারের সময় ট্র্যাক করুন।
  • বুঝতে চেষ্টা করুন কোন কারণে আপনি বারবার ফোনে ফিরে যাচ্ছেন।
  • মোবাইল ব্যবহারের ফলে আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনের ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা ভাবুন।
মোবাইল ব্যবহার কমানোর উপায়:
স্ক্রিন টাইম কমানো:
  • ফোনের "Screen Time" বা "Digital Wellbeing" অ্যাপ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অ্যাপের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করুন।
  • রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন বন্ধ করে রাখুন।
  • বিজ্ঞপ্তি বন্ধ করা:
  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের বিজ্ঞপ্তি বন্ধ করে রাখুন।
  • সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন।
  • অ্যাপ ডিলিট করা:
  • যেসব অ্যাপ ব্যবহারে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করেন, সেগুলো ডিলিট করে ফেলুন।
বিকল্প বিনোদন খোঁজা:
  • বই পড়া, খেলাধুলা, গান শোনা, বন্ধুদের সাথে দেখা করার মতো বিকল্প বিনোদন খুঁজে বের করুন।
  • মোবাইল ফ্রি জোন তৈরি করা:
  • ঘরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা (যেমন: খাওয়ার টেবিল, শয়নকক্ষ) মোবাইল ফ্রি জোন হিসেবে ঘোষণা করুন।
  • ডিজিটাল ডিটক্স:
  • নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য মোবাইল থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার চেষ্টা করুন।
মানসিক সহায়তা: মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার 
  • মোবাইল আসক্তি কাটিয়ে উঠতে পারলে মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন।
  • সহায়তা গোষ্ঠীতে যোগদান করুন।
 নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন:
  • মোবাইল আসক্তি কাটিয়ে ওঠতে রাতারাতি পরিবর্তন আশা করবেন না।
  • ধৈর্য ধরুন এবং নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যান।
  • পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা নিন।
  • ফোনের ওয়ালপেপার পরিবর্তন করে অনুপ্রেরণামূলক বার্তা লিখুন।
  • ফোন লক করার জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
  • "Do Not Disturb" মোড ব্যবহার করুন।
  • ফোনের পরিবর্তে বই, ম্যাগাজিন, খবরের কাগজ পড়ুন।
  • পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বেশি সময় কাটান।
মোবাইল আসক্তি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনিও মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আপনার মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের উপর নজর রাখুন: 
আপনার মোবাইল ডিভাইস কতক্ষণ ব্যবহার করেন তা ট্র্যাক করতে একটি অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে আপনার ব্যবহারের বিষয়ে সচেতন হতে এবং আপনার লক্ষ্যগুলি নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে।

মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের উপর নজর রাখা
নিজের জন্য নিয়ম তৈরি করুন: আপনি আপনার মোবাইল ডিভাইস কখন এবং কোথায় ব্যবহার করবেন তা নিয়ে নিয়ম তৈরি করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি রাতের বেলায় বা খাবার খাওয়ার সময় মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার না করা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

মোবাইল ডিভাইসের জন্য নিয়ম তৈরি করা
আপনার ডিভাইসের সেটিংস পরিবর্তন করুন: আপনি আপনার ডিভাইসের সেটিংস পরিবর্তন করে আপনার ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি আপনার ডিভাইসকে নির্দিষ্ট অ্যাপ বা গেমগুলিতে অ্যাক্সেস করতে বাধা দিতে পারেন।

মোবাইল ডিভাইসের সেটিংস পরিবর্তন করা
বিকল্প ক্রিয়াকলাপ সন্ধান করুন: যখন আপনি মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হন তখন আপনি অন্য কিছু করার জন্য নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি বই পড়তে, একটি হাঁটা যেতে বা বন্ধু বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারেন।

 বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বাবা-মাকে সময় দেয়া
আমাদের উচিত শিশুকে সময় দেওয়া, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, ভালো কথা বলা, শিশুদের ভালো ভালো কাজে যেমন অসহায় দরিদ্রের দান করা, মানুষের উপকার করা পশুপাখি গাছপালা প্রকৃতির প্রতি যত্নবান হওয়া। যাতে তারা বড় হয়ে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে, এক্ষেত্রে অভিভাবক পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

টিচারদেরকে আরো সচেতন হওয়া
তারা শ্রেণীকক্ষে ক্লাস চলাকালে মোবাইল ফোন আসক্তির কুপ্রভাব এবং শিশুদের করণীয় বিষয়ে শিক্ষা দিবেন।আশা করা যায় গণমাধ্যমগুলো শিশু ও অভিভাবকদের এক্ষেত্রে সচেতন সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা যদি উপরের বিষয়গুলোর প্রতি সঠিকভাবে নজর দিতে পারি তাহলে আশা করা যায় শিশুরা বিভিন্ন প্রকার ডিভাইস বা স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি থেকে রক্ষা পাবে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আজ শিশুর মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার কি তা নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে অন্য কোন টপিক নিয়ে হাজির হবো। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জমজম আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url